নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ ৬ মাস পার হয়ে গেলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষার ফলাফল প্রদানে ব্যর্থ সেখানকার শিক্ষকেরা। কচ্ছপের হাঁটার ন্যায় এমন ধীর গতির ফলাফল প্রদান কার্যক্রমে বিপাকে পড়েছেন হাজারো সাধারণ শিক্ষার্থী।
এছাড়া বিগত দিনে কথায় কথায় আন্দোলন, শ্রেণীকক্ষের সংকট ও উপাচার্য না থাকা সহ বিভিন্ন কারণে প্রায় সবগুলো বিভাগেই আছে দীর্ঘ সেশনজট। যেসব কারণে দীর্ঘায়িত শিক্ষাজীবন নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ করছেন হতাশা। তবে সেখানকার শিক্ষকেরা ফলাফল প্রকাশে এমন বিলম্বকে বিভিন্নভাবে যৌক্তিক দাবি করেছেন। আর প্রশাসনের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে এসেছে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়টির জনা দশেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানকার পদার্থ বিজ্ঞান, আইন, বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত জানুয়ারির ৫ তারিখের মধ্যে। প্রায় ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের ফলাফল তৈরি করা যায় নি। যে কারণে সাম্প্রতিক চাকরির পরীক্ষা কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশে যেসব বিজ্ঞপ্তি হয়েছে সেগুলোর একটিতেও তারা আবেদন করতে পারেন নি।
বিভাগ চারটির একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গত ৭ মাসে বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রজ্ঞাপনে কয়েক হাজার কর্মকর্তার বিশাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছেড়েছে সরকার। কিন্তু তারা আবেদন করতে পারেন নি শুধুমাত্র পরীক্ষার ফলাফল না থাকায়। তারা আরো উল্লেখ করেন, সম্প্রতি যারা যারাই বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন সবাইকে করোনা পরিস্থিতির দোহাই দেয়া হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনা পরিস্থিতির আগে তিনমাস সময় গেছে। শিক্ষকরা আন্তরিক হলে এ সময়ে ফলাফল প্রকাশ করা যেতো। অন্যদিকে এই পরিস্থিতিতেও এসএসসির লাখ লাখ শিক্ষার্থীর রেজাল্ট হচ্ছে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্ট হচ্ছে, চাকরির নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই প্রতিদিন রেজাল্ট না করতে পারার নিত্য নতুন অজুহাত তৈরি হচ্ছে।
এই চারটি বিভাগের বাইরে আরো সাতটি বিভাগের বিভিন্ন সেশনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানালেন, তাদেরও বিভিন্ন সেমিস্টার পরীক্ষার ফল আটকে আছে দীর্ঘদিন। গত বছর উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন ও পরবর্তীতে নতুন উপাচার্য নিয়োগে বিলম্ব হওয়ায় অনেকের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এছাড়া শ্রেণীক্ষের তীব্র সংকটের পুরনো কারণে নির্ধারিত সময়ে সেমিস্টার শেষ হতে দেরি হচ্ছে। এসব কারণে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর কম-বেশি সেশনজট আছে। ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হবার বিষয়টি স্বীকার করেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক সমীরণ রায়। তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব রুখতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিস বন্ধ আছে। যেকারণে শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নের যে প্রশাসনিক কার্যক্রম থাকে সেগুলো করা যাচ্ছে না। তিনি আরো উল্লেখ করেন, সেমিস্টারের খাতাগুলো পুনঃমূল্যায়নের জন্য বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় পরীক্ষকের কাছে যায়। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের কাছে খাতা পাঠানো বা তাদের কাছ থেকে সেগুলো আনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় সবার ফলাফল প্রকাশে অনাকাক্সিক্ষত বিলম্ব হচ্ছে। এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির নবনিযুক্ত উপাচার্য ড.মোঃ ছাদেকুল আরেফিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতির আগে প্রতিটি বিভাগের প্রতি আমার নির্দেশনা ছিল তারা যেন একাডেমিক ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা করে সেশনজট কমিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষার ফলাফল তৈরি প্রক্রিয়ায় কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা সমাধানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিক সভা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Leave a Reply